দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। অনিশ্চয়তা ও সংশয়ের মধ্যেও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো এখন নির্বাচনী প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রার্থী বাছাইয়ের প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করেছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইতোমধ্যেই এই প্রাথমিক তালিকা যাচাই-বাছাই শুরু করেছেন। শরিক দলের তালিকা সংযুক্ত করার পর তিনি দেশে ফিরে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবেন।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতে, এবারের নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইই প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য। গত বছরের অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ আবারও গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করেছে। দীর্ঘ ১৫ বছর ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত থাকার পর এবার সাধারণ ভোটাররা ভোট দিতে উন্মুখ হয়ে আছেন।
তাঁদের মতে, ভোটাধিকার একটি গণতান্ত্রিক দেশের সবচেয়ে বড় নাগরিক অধিকার। ভোটের পরিবেশ নির্বিঘ্ন, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ রাখা সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোরও দায়িত্ব। প্রার্থী বাছাই থেকে শুরু করে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে রাজনৈতিক দলগুলোর আচরণ হবে নির্বাচনের মান নির্ধারণের মূল উপাদান।
এই দায়িত্ববোধ থেকেই বিএনপি এখন নির্বাচনী প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছে। দলটির একাধিক শীর্ষ পর্যায়ের নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৩০০ আসনের জন্য প্রাথমিক প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ প্রায় শেষ। পাশাপাশি শরিক দলগুলোর সঙ্গে আসন বণ্টনের আলোচনা চলছে।
বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, শরিক দলগুলোর কাছ থেকে প্রত্যাশিত আসনের তালিকা চাওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটি দল তাদের তালিকা বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে হস্তান্তর করেছে।
বিশ্বাসযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমান নিজেই এসব তালিকা পর্যালোচনা করছেন। শরিকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্রথমে তাদের জন্য নির্ধারিত আসন চূড়ান্ত করবেন, এরপর ঘোষণা করা হবে বিএনপির পূর্ণাঙ্গ প্রার্থী তালিকা।
দলের স্থায়ী কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, “তারেক রহমান দেশে ফেরার পরই বিএনপির প্রার্থী তালিকা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে। তবে যোগ্য প্রার্থীদের অনানুষ্ঠানিকভাবে শিগগিরই সবুজ সংকেত দেওয়া হবে।”
মনোনয়ন নির্ধারণে পাঁচটি মাপকাঠি
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে পাঁচটি প্রধান যোগ্যতার মাপকাঠি নির্ধারণ করেছেন—
1️⃣ ক্লিন ইমেজ: যেসব নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখল বা দুর্নীতির অভিযোগ নেই, তারা অগ্রাধিকার পাবেন।
2️⃣ এলাকায় জনপ্রিয়তা: বিভিন্ন জরিপের মাধ্যমে যাচাই করা হয়েছে প্রার্থীর জনসমর্থন।
3️⃣ দল ও দেশের জন্য ত্যাগ: গণতন্ত্রের আন্দোলনে যাঁরা নির্যাতন, গুম, কারাভোগসহ নানা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাঁদের গুরুত্ব দেওয়া হবে।
4️⃣ সাংগঠনিক অবদান: যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে সংগঠন টিকিয়ে রেখেছেন ও কর্মীদের পাশে থেকেছেন, তাঁরা মনোনয়ন পাবেন।
5️⃣ দলীয় কোন্দলমুক্ত: যারা এলাকায় গ্রুপিং বা কোন্দলে জড়াননি, তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
এই পাঁচটি মানদণ্ডের ভিত্তিতেই বিএনপি প্রাথমিক মনোনয়ন তালিকা তৈরি করেছে। তবে সমযোগ্য একাধিক প্রার্থী থাকলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন তারেক রহমান নিজে।