আগামী ফেব্রুয়ারিকে লক্ষ্য করে দেশে নির্বাচনি হাওয়া বইতে শুরু করেছে। নির্বাচনের প্রস্তুতিতে এখন পুরোপুরি ব্যস্ত প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। দলটি ইতোমধ্যেই প্রার্থী বাছাই ও ইশতেহার প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে।
প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হতে পারে। এরপর ধাপে ধাপে সাক্ষাৎকার ও মূল্যায়নের মাধ্যমে বিএনপির মনোনয়ন বোর্ড চূড়ান্ত প্রার্থী নির্ধারণ করবে। এ ক্ষেত্রে আন্দোলন-সংগ্রামে নেতাদের ভূমিকা, জনসম্পৃক্ততা ও সাংগঠনিক ত্যাগকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।
প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। ২৪ ও ২৫ সেপ্টেম্বর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঢাকার পাশাপাশি সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, রাজশাহী, পাবনা, জামালপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও গাইবান্ধার মনোনয়নপ্রত্যাশীরা সাক্ষাৎকার দেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমদ ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন এ সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। একই আসনে একাধিক প্রার্থীকে ডেকে তাঁদের বক্তব্য শোনা হয়।
এছাড়া ২৮ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় হয়। এর আগে বরিশাল, কুমিল্লা ও রাজশাহী অঞ্চলের কয়েকটি আসনের প্রার্থীদের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। বিএনপির শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, অক্টোবরের মধ্যেই আসনভিত্তিক তালিকা চূড়ান্ত করবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। পাশাপাশি মিত্রদলগুলোকেও সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম জমা দিতে বলা হয়েছে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “অনেক এলাকায় প্রার্থীর সংখ্যা বেশি। সেখানে সবাইকে ডেকে বলা হচ্ছে—যাঁকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে, অন্যদের ঐক্যবদ্ধভাবে তাঁর পক্ষে কাজ করতে হবে। শরিকদের জন্য কিছু আসন ছাড়ার কথাও ভাবা হচ্ছে।”
ইশতেহার প্রণয়ন
প্রার্থী বাছাইয়ের পাশাপাশি সময়োপযোগী ইশতেহার প্রণয়নের কাজও শুরু করেছে বিএনপি। দলটির ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবকে প্রাধান্য দিয়ে গণমুখী ও আধুনিক ইশতেহার তৈরি করা হচ্ছে। এ কাজে যুক্ত আছেন কয়েকজন সিনিয়র নেতা, জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবী, সাবেক আমলা, কূটনীতিক ও অর্থনীতিবিদ।
ইশতেহারে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য, ন্যায়পাল নিয়োগসহ রাজনৈতিক সংস্কারের প্রস্তাব থাকছে। পাশাপাশি নাগরিকবান্ধব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে—সব নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্য কার্ড, নারীদের জন্য ফ্যামিলি কার্ড, কৃষকদের ফার্মার্স কার্ড, শিক্ষিত বেকারদের জন্য ভাতা এবং এক বছরে ৬০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিকল্পনা।
দলীয় সূত্র জানায়, খসড়া ইশতেহার প্রণয়নের পর হাইকমান্ড প্রয়োজনে সংযোজন-বিয়োজন করে তা চূড়ান্ত করবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ভোটের অন্তত দুই সপ্তাহ আগে আনুষ্ঠানিকভাবে ইশতেহার প্রকাশ করা হবে। এরপর তা তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, “ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি যুগোপযোগী নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করবে। রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা প্রস্তাব এতে গুরুত্ব পাবে। আমরা বিশ্বাস করি, এ ইশতেহার সর্বমহলে প্রশংসিত হবে।”