।। নিউজ ডেস্ক।।
ঢাকার কেরানীগঞ্জে চালু হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম ‘বিশেষ কেন্দ্রীয় কারাগার’, যা কারা ব্যবস্থাপনায় একটি নতুন মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর এই কারাগারটি মূলত ২০২০ সালের ২৭ ডিসেম্বর নারী বন্দিদের জন্য ‘ঢাকা মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার’ হিসেবে উদ্বোধন করা হলেও দীর্ঘদিন জনবল ও অবকাঠামোগত সংকটে সেটি চালু করা সম্ভব হয়নি।
নতুন প্রেক্ষাপটে মহিলা কারাগারের নাম পাল্টিয়ে এখন এর কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে ‘বিশেষ কেন্দ্রীয় কারাগার’ নামে। কারাগারটির প্রবেশপথে ‘বিশেষ কেন্দ্রীয় কারাগার’ নামে নামফলক বসানোর কাজ চলছে। ভিতরে চলছে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বসানোর প্রস্তুতি। কর্মকর্তাদের মতে, এটির উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশের কারা ব্যবস্থাপনায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এরই মধ্যে ওই বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপনও জারি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আসছে ১৫ মে বা তার আশপাশের কোনো দিন আনুষ্ঠানিকভাবে এটির কার্যক্রম শুরু হতে পারে। এই কারাগারে নারী-পুরুষ উভয় ধরনের বিশেষ বন্দিকে রাখা হবে। বিশেষ করে ডিভিশনপ্রাপ্ত, আলোচিত মামলার আসামি ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বন্দিদের নিরাপদভাবে রাখার জন্য এখানে গড়ে তোলা হয়েছে ‘হাই সিকিউরিটি’ সেল। মানসিক ভারসাম্যহীন বন্দিদের জন্য রাখা হয়েছে আলাদা ‘মেন্টাল ওয়ার্ড’ এবং তাদের চিকিৎসার জন্য রয়েছে একটি তিনতলা বিশিষ্ট আধুনিক কারা হাসপাতাল।
কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন জানান, ‘‘নিরাপত্তা ও কারা ব্যবস্থাপনার প্রতিটি স্তরে আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে এই কারাগারটিকে একটি মডেল হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে। এখানে বন্দিদের সুস্থ, নিরাপদ এবং পুনর্বাসনবান্ধব পরিবেশে রাখার চেষ্টা থাকবে।’’
৩০০ বন্দির ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এই কারাগারে নিরাপত্তার জন্য বসানো হয়েছে উন্নত স্ক্যানিং ব্যবস্থা—বডি স্ক্যানার, লাগেজ স্ক্যানার ও আর্চওয়ে গেট। রয়েছে শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা এবং মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক জ্যামার, যাতে বন্দিরা বাইরের সঙ্গে অবৈধ যোগাযোগ করতে না পারেন।
কারাগারটির ভেতরে আরও রয়েছে পাঠাগার, ডে-কেয়ার সেন্টার, বিদ্যালয়, ওয়াশিং প্ল্যান্টসহ বন্দিদের জন্য নানা কর্মমুখী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। বন্দিদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে যে ধরনের শিক্ষা ও মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা প্রয়োজন, তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আধুনিক সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে।
ঢাকা বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স) মো. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘‘এই বিশেষ কেন্দ্রীয় কারাগার আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করে গড়ে তোলা হয়েছে। এটি শুধু নিরাপত্তা নয়, বন্দিদের পুনর্বাসনের বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিচ্ছে।’’
কারা অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (উন্নয়ন) মো. জান্নাত-উল ফরহাদ জানান, বর্তমানে এই কারাগারে একজন সিনিয়র জেল সুপার ও একজন জেলার দায়িত্ব পালন করবেন। আপাতত ১০০ জন প্রশিক্ষিত কারারক্ষী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যা ভবিষ্যতে প্রয়োজন অনুযায়ী বাড়ানো হবে।