All Bangla News

সেবা খাতের তুলনায় পিছিয়ে যাচ্ছে উৎপাদন খাত: শুমারির তথ্য

abn
abn

দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা গত এক দশকে ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান বৃদ্ধির পেছনে বড় অবদান রেখেছে সেবা খাত। তবে এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে উৎপাদন তথা শিল্প খাত, অর্থাৎ দেশে যে হারে শিল্পপ্রতিষ্ঠান তৈরি হওয়া প্রয়োজন ছিল, সেটি হয়নি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২৪ সালের অর্থনৈতিক শুমারির প্রাথমিক ফলাফলে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রাথমিক এ ফলাফল প্রকাশ করা হয়। যদিও চূড়ান্ত ফলাফল আরও তিন মাস পর প্রকাশ করা হবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণে টাস্কফোর্সের সভাপতি কে এ এস মুরশিদ। অনুষ্ঠানে অর্থনৈতিক শুমারি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানান সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের পরিচালক এস এম শাকিল আখতার।

রাতারাতি ধনী হওয়া বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের শ্রমিকেরা এখন আন্দোলন করছে। যেমন বেক্সিমকোর কথা বলা যায়। সরকার নিজের টাকা খরচ করে এসব প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের বেতন দিচ্ছে। দেখা গেছে, এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো মূলধন নেই, খালি লোন আর লোন। দেশে আর্থিক খাতে বৈষম্য কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে তার নিদারুণ উদাহরণ এটি।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ

দেশে এ নিয়ে চারটি অর্থনৈতিক শুমারি হয়েছে। এর আগে দেশের শিল্প ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা, মালিকানার কাঠামো, জনবল, উৎপাদিত পণ্য ও সেবার ধরন প্রভৃতি তথ্য উঠে এসেছে এ প্রতিবেদনে। অর্থনৈতিক শুমারিতে কৃষি খাতকে ধরা হয় না।

সর্বশেষ অর্থনৈতিক শুমারি অনুসারে, দেশে বর্তমানে ১ কোটি ১৮ লাখ ৭৭ হাজার ৩৬৪টি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে গ্রামে রয়েছে ৭০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান, বাকিটা শহর এলাকায় অবস্থিত। অর্থাৎ শহরে শ্রমঘন ও বড় প্রতিষ্ঠানের প্রাধান্য থাকলেও সংখ্যার দিক থেকে বেশি প্রতিষ্ঠান গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত। অন্যদিকে এসব অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানে ৩ কোটি সাড়ে ৭ লাখের বেশি মানুষ কাজ করছেন। এ ক্ষেত্রে শহরের কর্মসংস্থান ৪৩ শতাংশ, বাকিটা গ্রামে।

পিছিয়ে উৎপাদন খাত

শুমারিতে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শিল্প উৎপাদন ও সেবা—এই দুই খাতে ভাগ করা হয়েছে। দেখা গেছে, ২০১৩ সালে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উৎপাদন খাতের হিস্যা ছিল ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। গত ১১ বছরের ব্যবধানে উৎপাদন খাতের এ অবদান কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশে। বিবিএসের হিসাবে বর্তমানে দেশে ১০ লাখ ৪১ হাজারের বেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।

এদিকে উৎপাদন খাতে প্রবৃদ্ধি কমলেও বেড়েছে সেবা খাতে। বর্তমানে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের ৯১ শতাংশের বেশি হচ্ছে সেবা খাতের, যা ২০১৩ সালে ছিল ৮৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ। মুদিদোকান থেকে শুরু করে অনলাইনের বেচাকেনা—সবই সেবা খাতের অন্তর্ভুক্ত। তবে সাধারণত শিল্প খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বেশি হয়। অর্থনীতির আকার বাড়াতেও এই খাতের ভূমিকা বেশি।

অর্থনৈতিক শুমারিতে খানাভিত্তিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের চিত্রও উঠে এসেছে, যা মূলত ইনফরমাল বা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত হিসেবে পরিচিত। বাসাবাড়িতে কুটির শিল্পের মতো বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও ফুটপাতের অস্থায়ী দোকান প্রভৃতি এ খাতে ধরা হয়েছে। শুমারিতে দেখা যায়, গত ১১ বছরে এ খাতের উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে ৭৮ শতাংশ। বিবিএসের হিসাবে বর্তমানে দেশে ৫০ লাখের বেশি ইনফরমাল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ ছাড়া দেশে ই–কমার্সসহ অনলাইন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এখন ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৭৮।

এর বাইরে আরও কিছু সমস্যার কথা জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। এর মধ্যে রয়েছে অবকাঠামোগত সমস্যা, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, দক্ষ জনবলের অভাব, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সমস্যা, বিপণন সমস্যা ও কাঁচামালের সংকট।

যেসব সমস্যা রয়েছে

শুমারিতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে গিয়ে কী ধরনের সমস্যায় পড়েন, সে তথ্যও জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। প্রায় ৮৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, ব্যবসা পরিচালনার জন্য তাদের কাছে পর্যাপ্ত মূলধন নেই। আবার যাদের মূলধন নেই, তাদের মধ্যে এক–তৃতীয়াংশ আবার ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ পায় না। সাধারণত শিল্প খাতের জন্য বেশি পরিমাণে মূলধন ও ঋণ প্রয়োজন হয়। সেখানে অল্প কিছু বিনিয়োগ নিয়ে সেবা খাতের প্রতিষ্ঠান শুরু করা যায়। ফলে মূলধনের অভাবে উৎপাদন খাত কম বেড়েছে।

এর বাইরে আরও কিছু সমস্যার কথা জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। এর মধ্যে রয়েছে অবকাঠামোগত সমস্যা, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, দক্ষ জনবলের অভাব, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সমস্যা, বিপণন সমস্যা ও কাঁচামালের সংকট।

প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, দেশে অনেক উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। তবে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে উদ্যোক্তাদের বেশির ভাগই মূলধন সমস্যায় রয়েছেন। আবার যাঁদের মূলধন নেই, তাঁরা সহজে ঋণও পান না। বিষয়টি দুঃখজনক।

দেশের আর্থিক খাত থেকে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠী হাজার কোটি টাকা সরিয়েছে উল্লেখ করে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানের নামে নেওয়া এত টাকা কোথায় গেছে, কেউ জানেন না। ব্যাংক খালি হয়ে গেছে। অথচ গ্রামের ছোট উদ্যোক্তারা প্রয়োজনীয় মূলধন পান না।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘রাতারাতি ধনী হওয়া বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের শ্রমিকেরা এখন আন্দোলন করছে। যেমন বেক্সিমকোর কথা বলা যায়। সরকার নিজের টাকা খরচ করে এসব প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের বেতন দিচ্ছে। দেখা গেছে, এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো মূলধন নেই, খালি লোন আর লোন। দেশে আর্থিক খাতে বৈষম্য কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে তার নিদারুণ উদাহরণ এটি।’

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *