সরকারি কর্মচারীদের সাধারণ ভবিষ্য তহবিল (জিপিএফ) এবং প্রদেয় ভবিষ্য তহবিলে (সিপিএফ) টাকা রাখার বিপরীতে আগের সুদের হারই বহাল রাখা হয়েছে। এ হার ১১ থেকে ১৩ শতাংশ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ গতকাল বুধবার এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত সুদের হার ১৩ শতাংশ। ১৫ লাখ ১ টাকা থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত সুদ ১২ শতাংশ এবং ৩০ লাখ ১ টাকা থেকে তার বেশি টাকার বিপরীতে সুদ ১১ শতাংশ।
জিপিএফ-সিপিএফে টাকা রাখলে সরকারি কর্মচারীরা একসময় ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ সুদ পেতেন। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে তৎকালীন অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার তা ১১ থেকে ১৩ শতাংশে নামিয়ে এনেছিলেন। তখন থেকে সে হারই বহাল রয়েছে।
ট্রেজারি বন্ডের সুদের হারের সঙ্গে সংগতি রেখে সম্প্রতি সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বাড়িয়ে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করায় সরকারি কর্মচারীরা আশা করেছিলেন যে জিপিএফ-সিপিএফের সুদের হারও কিছুটা বাড়তে পারে; কিন্তু তা আর হয়নি।
একসময় সরকারি কর্মচারীরা মূল বেতনের ৮০ শতাংশ পর্যন্ত জিপিএফে টাকা রাখতে পারতেন। তবে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ বিভাগ সুদের হার না কমিয়ে জিপিএফে টাকা রাখার সীমা বেঁধে দেয় মূল বেতনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ।
যেসব কর্মচারী রাজস্ব খাত থেকে বেতন পান তাঁরা টাকা রাখেন জিপিএফে। আর রাজস্ব খাতের বাইরে থেকে যাঁরা বেতন পান তাঁরা টাকা রাখেন সিপিএফে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও করপোরেশনের মতো সিপিএফভুক্ত সব প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সংগতি একরকম না হওয়ায় তারা তাদের নিজস্ব আর্থিক বিধিবিধান ও আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী জিপিএফের হার অনুসরণ করে সুদ দিতে পারবে।
অর্থ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে সুদের পরিবর্তে মুনাফা উল্লেখ করা হয়েছে। সরকারি হিসাবে যদিও তা সুদ লেখা। কিন্তু সুবিধাভোগীরাও একে সুদ বলতে নারাজ। তাঁরা মুনাফা বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তবে সরকারের হিসাবের খাতায় যা সুদ, সেটিই বিনিয়োগকারীদের কাছে মুনাফা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সুদ-মুনাফার এ বিভ্রান্তির জন্য সরকারই দায়ী। বাংলায় সব জায়গায় মুনাফা বলা থাকলেও ইংরেজিতে বলা আছে ইন্টারেস্ট রেট বা সুদের হার। বাংলায় মুনাফা (লভ্যাংশ) বললে ইংরেজিতে প্রফিট লিখে রাখার কথা থাকলেও অর্থ বিভাগ তা করছে না। যদিও সুদ আর মুনাফা যা–ই বলা হোক না কেন, বিনিয়োগকারীদের তা দেওয়া হয় সরকারি কোষাগার থেকেই।
অর্থ বিভাগের প্রবিধি অনুবিভাগের ২০২০ সালের ১৭ জুনের এক চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকারি কর্মচারীদের পেনশন সহজীকরণ আদেশ, ২০২০-এর ২.০৫ (খ) নম্বর অনুচ্ছেদ এবং ২.০৬ (ঘ) নম্বর অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী ইএলপিসিতে কর্মচারীর ভবিষ্য তহবিলের মুনাফাসহ জমা অন্তর্ভুক্ত এবং কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অবসরগামী কর্মচারীদের ভবিষ্য তহবিলের স্থিতি দেওয়ার বিষয়ে আদেশ জারি করতে বলা হয়েছে।
অথচ আগে জারি করা পেনশন সহজীকরণ আদেশ ২০০৯-এ ভবিষ্য তহবিলের ‘মুনাফা’র বদলে ‘সুদ’ উল্লেখ ছিল—এ কথাও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বর্তমানে ভবিষ্য তহবিলের সুদকে মুনাফা হিসেবে প্রতিস্থাপন করার কারণে বিদ্যমান ভবিষ্য তহবিলের হিসাব দেওয়া–সংক্রান্ত ফরমে সুদের পরিবর্তে মুনাফা শব্দটি লিপিবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন।
ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, অর্থ বিভাগ ২০০৯ সালের ১৯ অক্টোবর জেনারেল প্রভিডেন্ট ফান্ড রুলস, ১৯৭৯-এ সুদ শব্দের পরিবর্তে ‘সুদ অথবা ইনক্রিমেন্ট’ শব্দ প্রতিস্থাপন করেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ভবিষ্য তহবিলের হিসাব দেওয়া–সম্পর্কিত বিদ্যমান ফরমে ও তহবিলসংক্রান্ত সব ক্ষেত্রে ‘সুদ বা ইনক্রিমেন্ট’-এর পরিবর্তে মুনাফা শব্দটি প্রতিস্থাপন করতে হবে।