।। নিউজ ডেস্ক ।।
রাজধানী ঢাকায় দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সী অধিকাংশ শিশুর রক্তে সিসার মাত্রা নিরাপদসীমার প্রায় দ্বিগুণ পাওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআর,বি) পরিচালিত একটি সমীক্ষায় এই উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে।
২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ৫০০ শিশুর রক্ত পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ৯৮ শতাংশের রক্তে সিসার মাত্রা মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (CDC) নির্ধারিত সীমা ৩৫ মাইক্রোগ্রামের দ্বিগুণের কাছাকাছি বা তারও বেশি।
সিসা একটি বিষাক্ত ভারী ধাতু যা শিশুদের মস্তিষ্ক, কিডনি ও হাড়সহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। বিশেষ করে প্রসাধনী, ব্যাটারি শিল্প, রান্নার হাঁড়িপাতিল ও ঘরের ধুলোতে সিসার উপস্থিতি শিশুদের বিষক্রিয়ার ঝুঁকি বাড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, শিশুদের শরীরে সিসার শোষণ প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি। কারণ শিশুদের সহজাত কৌতূহল ও মুখে হাত দেওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে, যা বিষাক্ত পদার্থ গ্রহণের ঝুঁকি বাড়ায়।
ইউনিসেফ জানিয়েছে, বাংলাদেশে সাড়ে তিন কোটির বেশি শিশু বিপজ্জনক মাত্রায় সিসার সংস্পর্শে রয়েছে। ঢাকার বস্তি ও শিল্পাঞ্চলে দূষণের মাত্রা বেশি থাকার কারণে ওই এলাকায় শিশুদের মধ্যে সিসার মাত্রা আরও বেশি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সিসার সংস্পর্শ শিশুদের স্থায়ী বুদ্ধিমত্তা হ্রাস, আচরণগত সমস্যা, মনোযোগ কমে যাওয়া এবং শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মারাত্মক ক্ষেত্রে এটি কোমা, খিঁচুনি এবং মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যক্তিগত স্তরে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং দূষিত এলাকায় থাকার পরিমাণ কমানো জরুরি। তবে সমস্যার মূল সমাধান বড় পরিসরে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ, শিল্পকর্মের নিয়মিত তদারকি ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতেই নিহিত।
আইসিডিডিআর,বি ও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, সিসা মিশ্রিত হলুদের বিরুদ্ধে জাতীয় প্রচারণা ও নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক সাফল্য পাওয়া গেছে। তবে আরও কঠোর পদক্ষেপ ও সচেতনতা প্রয়োজন।
দূষণ রোধে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে দেশের শিশুদের স্বাস্থ্য আরও ঝুঁকির মুখে পড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।