All Bangla News

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ইলন মাস্ক: দ্বিদলীয় ব্যবস্থায় পরিবর্তনের ইঙ্গিত

abn
abn

।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।
বিশ্বের শীর্ষ ধনী ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের ‘আমেরিকা পার্টি’ গঠনের ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের দুই দলীয় রাজনীতিতে এক নতুন ঢেউ তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের দ্বিদলীয় কাঠামোর বিরুদ্ধে এ যেন এক প্রভাবশালী ধনকুবেরের স্পষ্ট অবস্থান। নতুন দল গঠনের মাধ্যমে মাস্ক মূলত রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট এই দুই প্রধান দলের একচেটিয়া রাজনীতিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন।

মাস্কের দল গঠনের সিদ্ধান্ত হঠাৎ কোনো আবেগ থেকে নয়। ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক ঘনিষ্ঠ এই সহযোগী বিগত কয়েক মাস ধরেই রিপাবলিকানদের আর্থিক নীতির সমালোচনায় মুখর ছিলেন। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সদ্য পাস হওয়া ‘বিগ বিউটিফুল বিল’ নিয়ে তাঁর আপত্তি তীব্র। বিলটিকে মাস্ক বলেছেন “যুক্তরাষ্ট্রকে দেউলিয়া করে দেবে।”

ট্রাম্পের এই বিল করছাড় ও ব্যয় বৃদ্ধির যে নীতিকে সামনে এনেছে, সেটিকে মাস্ক কেবল অযৌক্তিকই বলেননি, বরং তাঁর রাজনৈতিক প্রতিরোধে রূপান্তরিত করেছেন। ট্রাম্পের কাছ থেকে সরকারি দায়িত্ব পাওয়ার পর বিচ্ছেদ এবং সেই বিরোধ এখন পরিণত হয়েছে এক পৃথক রাজনৈতিক অভিযাত্রায়।

‘আমেরিকা পার্টি’র ঘোষণা আসে গত শনিবার, ইলন মাস্কের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার)। একই দিন তিনি একটি প্রতীকী পোস্টে দুই মাথাওয়ালা সাপের ছবি শেয়ার করে লেখেন “ইউনিপার্টি শেষ করুন।” এটি রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় দলকেই একসঙ্গে দায়ী করার এক রাজনৈতিক প্রতীকী বার্তা।

এর আগে মাস্ক এক জরিপে প্রশ্ন রেখেছিলেন, ‘আপনারা কি ইউনিপার্টি থেকে স্বাধীনতা চান?’ ১২ লাখের বেশি অংশগ্রহণকারী ভোট দেন এবং তাদের দুই তৃতীয়াংশ নতুন রাজনৈতিক দল চায় বলে মত দেন। পরে মাস্ক বলেন, “আপনারা নতুন দল চেয়েছেন, আপনারা তা পাবেন।”

ইলন মাস্কের কৌশল সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নয় বরং কংগ্রেসের নির্ধারক আসনগুলোতে প্রভাব বিস্তার। মাস্কের লক্ষ্য হলো এমন আসন দখল করা, যেগুলোতে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের আধিপত্য নেই। এভাবে আইন পাসের সময় ‘সিদ্ধান্তমূলক ভোট’ দিতে পারবে আমেরিকা পার্টি।

তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী, সিনেটের ২–৩টি এবং প্রতিনিধি পরিষদের ৮–১০টি আসন জয় করাই হবে দলটির প্রথম লক্ষ্য। এটি কেবল মার্কিন রাজনীতিতে এক নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার দৃষ্টান্তই নয়, বরং ক্ষমতার ভারসাম্য পাল্টে দেওয়ার বাস্তব সম্ভাবনাও তৈরি করছে।

মাস্কের এই দল গঠনকে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দিলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত ভিন্ন। বিশেষত ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী কংগ্রেস নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে রিপাবলিকানদের জন্য এটি ‘স্পষ্ট হুমকি’ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষক ম্যাট শুমেকার।

বর্তমানে কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানদের আসন ২২০, ডেমোক্র্যাটদের ২১২। এমন একটি হালকা ব্যবধানের পরিস্থিতিতে মাস্কের দল যদি কয়েকটি আসনে ভোট কাটে, তাহলে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে হতে পারে।

বিশ্বের শীর্ষ ধনী মাস্কের আর্থিক সক্ষমতা, টেকনোক্র্যাট ইমেজ ও তরুণ ভোটারদের মধ্যে জনপ্রিয়তা এই তিনটি মিলিয়ে তিনি অনন্য এক প্রার্থী ও স্পন্সর। তবে বিশ্লেষক ইভান নিয়েরম্যান সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ইলন মাস্কের দল হয়তো নিজেরা আসন জিতবে না, কিন্তু রিপাবলিকানদের হারিয়ে দিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

ইলন মাস্কের জনপ্রিয়তা অনেকটাই তার প্রযুক্তিভিত্তিক কর্মকাণ্ড, স্যোশাল মিডিয়া উপস্থিতি এবং ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্বের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। বিশেষত তরুণ মার্কিন ভোটারদের কাছে তিনি ‘রকস্টার’ ইমেজের রাজনৈতিক উদ্যোক্তা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ব্যবস্থায় তৃতীয় কোনো দলের উত্থান প্রায় অসম্ভব এক লড়াই। কঠোর নিয়ম কানুন, উচ্চ ব্যয়, প্রচারসীমা ও প্রতিষ্ঠানগত বাধাগুলো নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগের পথ রুদ্ধ করে রাখে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফ্লাভিও হিকেল মন্তব্য করেন, “রিপাবলিকান সমর্থক গোষ্ঠী ও মেগা আন্দোলন এতটাই সংযুক্ত যে, মাস্কের পক্ষে সেই ভোট কেটে নেওয়া দুঃসাধ্য।”

ইলন মাস্কের ‘আমেরিকা পার্টি’ গঠনের ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যে আলোড়ন উঠেছে, তা হঠাৎ থেমে যাবে না। এটি ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন রিপাবলিকানদের জন্য যেমন চ্যালেঞ্জ, তেমনি ডেমোক্র্যাটদের জন্যও সতর্কবার্তা। রাজনীতিতে মাস্কের এই পদক্ষেপ কতটা দীর্ঘস্থায়ী বা কার্যকর হবে, তা বলার সময় এখনো আসেনি। তবে এটুকু নিশ্চিত যে, প্রযুক্তি, অর্থ, ও প্রভাব এই ত্রয়ীর সংমিশ্রণে ইলন মাস্ক এখন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক মঞ্চে এক ‘অজানা শক্তি’।

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *