।। নিউজ ডেস্ক।।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার তীব্র গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। ভারতে পালিয়ে যান দীর্ঘ দেড় দশক ধরে স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ চালানো তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অস্তিত্ব সংকটে পড়া এ দলটির প্রধান নেতা শেখ হাসিনাসহ বেশিরভাগ নেতার অবস্থান এখন ভারতসহ বিভিন্ন দেশে। এই অবস্থায় দলটি আবারও সক্রিয় রাজনীতিতে ফেরার চেষ্টা চালাচ্ছে। যেখানে দেশের ভেতরেই নেতৃত্ব খুঁজে নিয়ে তার হাত ধরে এই সংকট কাটানোর চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। খবর বিবিসি বাংলার।
এদিকে ভারত ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়া, দুবাই, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগ নেতারাও ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে হটাতে একাট্টা। কীভাবে বিদেশে বসে দেশের মধ্যে নানারকম অঘটন ঘটিয়ে সাধারণ মানুষকে সরকারের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলা যায়, সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে অনলাইনে সক্রিয় করছেন তৃণমূল পর্যায়ের পাতি নেতাদের।
ভারত এবং পশ্চিমের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলেছেন, তাদের শীর্ষ নেতা শেখ হাসিনাসহ তারা এখন মনে করছেন, দেশের ভেতরে দলের মুখপাত্র বা নেতা প্রয়োজন, যিনি আত্মগোপনে না থেকে প্রকাশ্যে এসে বিপর্যস্ত নেতাকর্মীদের সংগঠিত করবেন। তাদের এমন চিন্তায় সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর নাম রয়েছে। কিন্তু গ্রেফতার, মামলার ভয়ে এবং প্রতিকুল পরিস্থিতিতে তাদের কেউ এখনও সাহস করে এগিয়ে আসেননি। সেভাবে বিতর্কিত নন, দলটির এমন অন্য কোনো নেতা এগিয়ে আসবেন, সে ধরনের ইঙ্গিতও নেই।
যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপে রয়েছেন, এমন একাধিক আওয়ামী লীগ নেতার বক্তব্য হচ্ছে, তাদের দল ঢাকায় মুখপাত্র বা কোনো পদ দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো নেতার নাম ঘোষণা করতে চাইছে না। কারণ কারও নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হলেই তাকে মামলা, গ্রেফতারের মুখে পড়তে হতে পারে। এটি তাদের বিবেচনায় নিতে হচ্ছে। নেতারা অভিযোগ করছেন, ঢাকা থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার বাড়ানো হয়েছে। সেজন্য পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে তাদের দলের সভাপতি শেখ হাসিনাও সম্প্রতি বলেছেন, দেশের ভেতরে যারা সাহস নিয়ে এগিয়ে এসে দলকে সংগঠিত করার কাজে নেতৃত্ব দেবেন, তারাই নেতা। যদিও কেউ এখনও সেই সাহস দেখাননি।
দলটির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এখন বিদেশে অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, তাদের সরকারের পতনের আগে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সব হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার তারা চান। কিন্তু অনুশোচনার প্রশ্নে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ জনগণের কাছে জবাবদিহি করবে। এজন্য অন্য কোনো পক্ষের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার বিষয় নেই বলে উল্লেখ করেন মি. আরাফাত।
বিদেশে অবস্থান করা দলটির আরেকজন নেতা জানান, পরিস্থিতি সামলাতে তাদের কিছু ভুল ছিল, এমন আলোচনাও তাদের মধ্যে আছে। দলগতভাবে অবশ্য তারা এখনও কিছু বলেননি। এই নেতা উল্লেখ করেন, তাদের দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ এখনও হয়নি। তারা এখন পরিকল্পনার মাধ্যমে এগোতে চাইছেন এবং অল্প সময়ের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য তুলে ধরার বিষয় নিয়েও তারা আলোচনা করছেন।
তবে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ কিংবা শেখ হাসিনার বিকল্প এখনো ভাবছে না দলটির নেতাকর্মীরা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দমননীতি ও হত্যাকাণ্ডের জন্য দলটির নেতাকর্মীদের ক্ষমা চাওয়া কিংবা কারো অনুশোচনাটুকুও নেই। বরং দলটির নেতাকর্মীরা বিশ্বাস করে ষড়যন্ত্রের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে তারা।