All Bangla News

মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েও খরচ চালানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় আঁখি

abn
abn

ছোট একটি চায়ের দোকানের আয় দিয়ে ছয়জনের সংসার চালান ওবায়দুর রহমান (৫২)। দিন কাটে অভাব-অনটনে। জীবনের এমন পর্যায়ে আনন্দের উপলক্ষ নিয়ে এসেছে একটি সুসংবাদ। আর তা হলো, ওবায়দুরের বড় মেয়ে আসমাউল হুসনা (আঁখি) এবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। একদিকে সন্তানের সাফল্যের আনন্দ, অন্যদিকে কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। কারণ, তিনি শুনেছেন, মেডিকেলে পড়ালেখা করতে বেশ খরচ।

ওবায়দুর রহমানের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারার বড় বিহানালী ইউনিয়নের বেড়াবাড়ি গ্রামে। তাঁর মেয়ে আসমাউল হুসনা এবারের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ৯৯৮তম হয়েছেন।

ওবায়দুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বেড়াবাড়ি মোড়ে তাঁর চায়ের দোকান। চা বিক্রি করে সে টাকায় সংসার চলে। পাশাপাশি ধারদেনা করে মেয়ের পড়ালেখার খরচ চালাচ্ছেন। এখনো কিস্তি দিতে হয়। ভবিষ্যতে মেয়ের পড়ালেখার খরচ কীভাবে বহন করবেন, এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। ভর্তির টাকাই জোগাড় করতে পারেননি এখনো। ফলে ভর্তি করাতে পারবেন কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।

দরিদ্র পরিবারের অনেক না পাওয়ার মধ্যে বেড়ে উঠলেও পড়ালেখার প্রতি প্রবল ভালোবাসা আসমাউল হুসনাকে শিক্ষাজীবনের প্রতিটি ধাপে সাফল্য পাইয়ে দিয়েছে। গ্রামের বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক পাস করার পর তিনি ভর্তি হন এলাকার একটি বালিকা বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ২০২২ সালে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজে মেয়েকে ভর্তি করান আসমাউল হুসনার বাবা। সেখানেও জিপিএ-৫ পেয়ে সাফল্য আনেন অদম্য এই ছাত্রী।

আসমাউল হুসনা প্রথম আলোকে বলেন, উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর মেডিকেলের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন তিনি। তবে অর্থাভাবে কোচিং করতে বা কোনো প্রাইভেট পড়তে পারেননি। নিজেই পড়ালেখা চালিয়ে গেছেন। মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় কৃতকার্য হবেন, এমন মনোবল ছিল তাঁর। সেই আত্মবিশ্বাস ও নিজের নিয়মিত পড়ালেখার ফসল হিসেবে এই ফল করেছেন তিনি।

আজ শনিবার সকালে আসমাউল হুসনাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আধা পাকা বাড়ির দুই কক্ষের একটিতে থাকেন তিনি ও তাঁর ছোট দুই বোন। খাটের এক কোণে সাজিয়ে রাখা কিছু বই। সেখানে বসেই লেখাপড়া করেন তিনি।

আসমাউল হুসনার মা আরজিনা বিবি (৪৭) বলেন, টাকার অভাবে মেয়েকে প্রাইভেট পড়তে দিতে পারেননি। কোচিংয়েও ভর্তি করাতে পারেননি। কোনো গাইড বইও কিনে দিতে পারেননি। ঘরে বসেই মেয়ে পড়াশোনা করেছে। কীভাবে মেয়েকে ডাক্তারি পড়াবেন, সে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনিও।

বাগান্না উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরহাদ হোসেন বলেন, আসমাউল হুসনা মেধাবী শিক্ষার্থী। তিনি নিজের প্রচেষ্টায় এই সাফল্য পেয়েছেন। প্রতিষ্ঠানের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। তাঁর আগামী দিনের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে শিক্ষানুরাগী লোকজন যেন এগিয়ে আসেন, সে আহ্বান জানান তিনি।

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *