All Bangla News

নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনে অনলাইন জুয়া নিষিদ্ধের উদ্যোগ

abn
abn

।। নিউজ ডেস্ক।।
দেশে অনলাইন জুয়ার বিস্তার ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। তরুণ-তরুণীদের লক্ষ্য করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে ‘ঘরে বসে আয় করুন’ ধরনের লোভনীয় বিজ্ঞাপন। বিশেষ কিছু অ্যাপ, যেমন ‘CK444’ (সি কে-৪৪৪), তরুণদের আকৃষ্ট করছে লাখ টাকার লোভ দেখিয়ে। অনেকে শুরুতে কিছু অর্থ জিতলেও, অধিকাংশই শেষ পর্যন্ত নিঃস্ব হয়ে পড়ছে।

এই অনিয়ন্ত্রিত জুয়া রোধে সরকার নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনে অনলাইন জুয়াকে নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, “কয়েক দিনের মধ্যেই আইনটি পাস হবে বলে আশা করি। পাস হওয়ার পর অনলাইন জুয়ায় জড়িত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তিনি আরও জানান, “জুয়ার সঙ্গে জড়িত মোবাইল ব্যাংকিং, ফাইন্যান্সিয়াল হাউজ ও অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোকে নজরদারিতে আনা হবে। কিছু নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে একমুখী এবং অস্বাভাবিক লেনদেন হচ্ছে। এই টাকা ক্যাশ আউট হয়ে বিদেশে পাচার হচ্ছে।”

সাম্প্রতিক সময়ে হাইকোর্টও অনলাইন জুয়া ও বেটিং অ্যাপের কার্যক্রম তদন্তে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে। এই কমিটি ৯০ দিনের মধ্যে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেবে। বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর বেঞ্চে রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে এই আদেশ দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গত কয়েক বছরে বিটিআরসি ৩,৫০০-এর বেশি জুয়া সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট ও অ্যাপ বন্ধ করেছে। কিন্তু প্রতিবার ভিপিএন ব্যবহার করে সাইটগুলো পুনরায় চালু করা হচ্ছে। এছাড়া মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করে এসব অ্যাপ টিকে রয়েছে। এসব ট্রানজেকশন অস্বাভাবিক ও একমুখী, যেগুলো এক ধরনের অর্থ পাচারের ইঙ্গিত দেয়।

AHREFS-এর তথ্য বলছে, মার্চ মাসে শুধু ‘CK444’ কিওয়ার্ডে সার্চ হয়েছে ৯৫ হাজার বার। গুগল ট্রেন্ডস অনুযায়ী, দেশের রংপুর, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগে এসব সার্চের হার সবচেয়ে বেশি। ওয়েবসাইটটি গত মার্চে এক দিনেই পেয়েছে প্রায় ৩.৭ লাখ ভিজিটর।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) অনলাইন জুয়ার এই বিস্তারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা অবিলম্বে এর বিজ্ঞাপন বন্ধ এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, “সর্বোচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকার পরও সরকার দৃশ্যমান ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে।”

বাংলাদেশে নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান না থাকলেও সর্বস্তরের প্রায় ৫০ লাখ মানুষ এই অনলাইন জুয়ার সাথে জড়িত বলে অনুমান করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে শিক্ষার্থী ও বেকার যুবক থেকে শুরু করে ফুটপাতের চা দোকানিসেলুন দোকানদার, হকার, বাড়ির নিরাপত্তা প্রহরী, বিক্রয়কর্মী থেকে শুরু করে ভবঘুরে, বাস-ট্রাকের চালক-হেলপার, সিএনজি চালক, নির্মাণশ্রমিক, গৃহপরিচারিকা, রিকশাচালক ও দিনমজুর শ্রেণির মতো একেবারে নিম্ন আয়ের মানুষও অনলাইনে বাজি ধরার নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছেন। নিঃস্ব হয়ে কেউ কেউ নানান অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের অনলাইন জুয়ার বাজারের কোনো নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই, তবে অনুমান করা হয় প্রায় ৫০ লাখ মানুষ এ জুয়ায় জড়িত। তাদের মতে, তরুণ সমাজকে রক্ষায় অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা জরুরি। ডিজিটাল যুগের এই অপরাধে শুধু আইন দিয়ে প্রতিরোধ সম্ভব নয়। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা, ডিজিটাল নিরাপত্তা কাঠামো জোরদারকরণ এবং বিকল্প আয়মুখী প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগ নিতে হবে। না হলে অনলাইন জুয়ার এই বিষবৃক্ষ আরও বিস্তৃত হয়ে সমাজের ভিত কাঁপিয়ে দেবে।

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *