।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। সোমবার (২১ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে ভ্যাটিকান জানিয়েছে, স্থানীয় সময় রোববার সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে ভ্যাটিকানের কাসা সান্তা মার্টায় নিজ বাসভবনে মারা যান তিনি। এর আগে ইতালির রোমে একটি হাসপাতালে বেশ কিছুদিন তার চিকিৎসা চলে।
ভ্যাটিকান নিউজ জানায়, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত পোপ ফ্রান্সিসকে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে বেশ কয়েকবার তার শারীরিক অবস্থা বেশ গুরুতর পর্যায়ে চলে যায়। শ্বাসপ্রশ্বাস-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে পোপ ফ্রান্সিসকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। তবে কয়েকদিন আগে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরেন তিনি। ইস্টার উদযাপনের পরদিনই মারা গেলেন এই ধর্মগুরু। সেদিন তিনি মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গেও দেখা করেছিলেন।
ভ্যাটিকানের মুখপাত্র কার্ডিনাল ফারেল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘তার পুরো জীবন ছিল প্রভু ও তার গির্জার সেবায় নিবেদিত।’ মৃত্যুর একদিন আগেও তিনি সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে হাজির হয়ে হাজারো উপাসকের উদ্দেশ্যে ‘শুভ ইস্টার’ বার্তা প্রদান করেছেন। ভ্যাটিক্যানের টেলিভিশন চ্যানেলে কার্ডিনাল কেভিন ফারেল বলেন, গভীর দুঃখের সঙ্গে আমাকে আমাদের পবিত্র ফাদার ফ্রান্সিসের মৃত্যুর কথা ঘোষণা করতে হচ্ছে।
জাঁকজমকপূর্ণ জীবন খুবই অপছন্দ ছিল পোপ ফ্রান্সিসের। এমনকি পূর্বসূরীদের ব্যবহৃত অ্যাপোস্টলিক প্রাসাদের অলংকৃত বাসস্থানে কখনোই বাস করেননি তিনি। আর্জেন্টিনার এই ধর্মযাজক দরিদ্রদের প্রতি সহমর্মিতার জন্য বেশ পরিচিত ছিলেন।
ভ্যাটিকানের দাপ্তরিক ওয়েবসাইট ‘দি হোলি সি’–এর তথ্যমতে, পোপ ফ্রান্সিসের আগের নাম জর্জ মারিও বারগোগ্লিও। জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর, আর্জেন্টিনার বুয়েনস এইরেসে। তার বাবা মারিও হোসে বারগোগ্লিও এবং মা রেগিনা সিভোরি। ইতালীয় অভিবাসী বাবা মারিও ছিলেন রেলওয়ের হিসাবরক্ষক। কেমিস্ট হিসেবে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর ধর্মের পথে পা বাড়ান জর্জ মারিও। পরে তিনি দর্শন ও ধর্মতত্ত্বে পড়াশোনা করেন। ১৯৬৯ সালে ধর্মযাজক হন। ১৯৯৮ সালে আর্জেন্টিনায় আর্চবিশপ হন তিনি।
২০১৩ সালের ১৩ মার্চ পোপ নির্বাচিত হবার পর নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘ফ্রান্সিস’। তিনি ছিলেন ৭৪ সালের পর প্রথম নন-ইউরোপিয়ান পোপ। ৭৪১ সালে সিরিয়ান বংশোদ্ভূত তৃতীয় গ্রেগরির মৃত্যুর পর রোমে আর কোনো নন-ইউরোপিয় পোপ আসেননি। পোপ হওয়ার আগে ফ্রান্সিস আর্জেন্টিনার বুয়েনস এইরেসের আর্চবিশপ ছিলেন এবং ২০০১ সালে কার্ডিনাল পদে অধিষ্ঠিত হন।
তার পরিচিতি ছিল একজন বিনয়ী ও সাধারণ জীবনধারার ধর্মীয় নেতা হিসেবে। তিনি এমন একটি গির্জার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন যা শিশুদের যৌন নির্যাতন কেলেঙ্কারির জন্য বেশ সমালোচিত ছিল। সেই সাথে ভ্যাটিকানের আমলাতান্ত্রিক কোন্দলে জর্জরিত ছিল। গির্জায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার একটি স্পষ্ট ম্যান্ডেট নিয়েই তিনি পোপ নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ক্যাথলিক গির্জায় সংস্কার কখনো বন্ধ করেননি।
ক্যাথলিক ও নন–ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মের মানুষের মধ্যে ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। পোপ ফ্রান্সিস বলেছিলেন, ক্যাথলিক গির্জার দরজা সবার জন্য খোলা। এমনকি সমকামী, উভকামী ও রূপান্তরকামীদের (এলজিবিটি) গির্জায় আসতে বাধা নেই। তারা গির্জায় এসে প্রার্থনা করতে পারবেন। শুধু গির্জার নিয়মনীতি মানতে হবে।